Dream to BCS

Think positive, Be positive, Do positive

বিসিএস প্রিলি , লিখিত ভাইভায় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ও জাদুঘর সম্পর্কিত এই প্রশ্নগুলো আসে

বিসিএস প্রিলি , লিখিত ভাইভায় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ও জাদুঘর সম্পর্কিত প্রশ্ন আসে । চলুন দেখা নেয়া যাক
# যত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখতে এবং তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ ও স্মারক ভাস্কর্য। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত জায়গা এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নিয়ে লিখেছেন রাজীব পাল রনী
/
#বিজয় কেতন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর :
ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত বিজয় কেতন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ২০০০ সালের ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেন। এ জাদুঘরের ছয়টি গ্যালারিতে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বাংলাদেশের সামরিক যোদ্ধাদের নানা কীর্তি, স্মৃতিস্মারক, সেক্টর কমান্ডারদের আলোকচিত্র ও পরিচিতি, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত রাইফেল, কামান, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের বহনের কফিন ইত্যাদি প্রদর্শন করা হয়। জাদুঘরের সামনে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ভাস্কর্য ও সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা নামে দীর্ঘ মুরাল বা দেয়াল চিত্র আছে। বুধবার ব্যতীত বৃহস্পতি থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত, শনিবার ১০টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিজয় কেতন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর খোলা থাকে।

#বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর :
রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ে তোলা হয়। এ জাদুঘরে ২৫ মার্চ প্রতিরোধ যুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ব্যবহৃত পাগলা ঘণ্টা, রাবার শেল, পুলিশ বাহিনী কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত সার্চ লাইট, ২৫ মার্চের প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ অজ্ঞাত পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত সামগ্রী, শহীদ ইন্সপেক্টর গোলাম রাব্বানীর পোশাক, মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ শহীদ সদস্যদের ব্যবহৃত বেতের তৈরি ঢাল, স্বাধীন বাংলার প্রথম আইজিপির ব্যবহৃত চেয়ার, মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ আলোকচিত্র ও মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন নিদর্শন ও তথ্য সংরক্ষিত আছে। বুধবার ছাড়া বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা, শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত পুলিশ জাদুঘর খোলা থাকে।

#স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্য :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়ক দ্বীপে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য স্বোপার্জিত স্বাধীনতা অবস্থিত। এ ভাস্কর্যে রয়েছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৭১-এর গণবিপ্লব এবং আÍসমর্পণ, নারী নির্যাতন, যুব হত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যাকে উৎসর্গ করে এ ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। মূল বেদির ওপর আছে ৬টি ভাস্কর্য। ওপরে বামে আছে মুক্তিযোদ্ধা কৃষক আর ডানে অস্ত্র হাতে দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাঝখানে অস্ত্র হাতে নারী ও পুরুষ যোদ্ধারা উড়িয়েছে বিজয় নিশান। পুরো ভাস্কর্যটি প্রায় ১৫ ফুট উঁচু। ভাস্কর্যটি নকশা করেছে ভাস্কর শামীম সিকদার এবং সহকারী শিল্পী হিমাংশু রায়।

#বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর :
ঢাকার বিজয় সরণিতে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর। এ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীর ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র, জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণের চিত্রসহ দুর্লভ দলিল, ১৮শ শতক থেকে বর্তমানকালের কামান, ৭১-এর যুদ্ধে ব্যবহৃত মেশিনগান, গান পাউডার, সেমি হ্যান্ড ল্যান্সার, গ্রেনেড ট্যাংক এম-৭৫, বীরশ্রেষ্ঠ পদক, বীরউত্তম পদক, বীরবিক্রম পদক, বীরপ্রতীক পদক, বিভিন্ন সেক্টর কমান্ডারদের নির্দেশনার চিত্র এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সেনা সদস্যদের ব্যবহৃত অস্ত্র দেখার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে এ জাদুঘরে। বুধবার ব্যতীত শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ৬টা এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগত দর্শনার্থীদের জন্য সামরিক জাদুঘর খোলা থাকে।

#শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর :
জাহানারা ইমাম ও রুমীর পুণ্যস্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গড়ে উঠেছে ঢাকার ৩৫৫ এলিফ্যান্ট রোডের কণিকা বাড়ির দোতলায় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর। দুকক্ষ বিশিষ্ট এ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রেরণা জোগাবে এমন স্বাক্ষর পাওয়া যাবে এ জাদুঘরে। মুক্তিযুদ্ধকালীন পোস্টার, শহীদ রুমীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও আলোকচিত্র, জাহানারা ইমামের সাহিত্যকমর্, তৈজসপত্র, বই, মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমামের ছেলে রুমীর খোঁজখবর নেয়ার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল প্রতিনিধির প্রতি তার স্বহস্তে লেখা চিঠির কপি এ জাদুঘরে সংগৃহীত রয়েছে। জাহানারা ইমাম স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। জাদুঘর খোলা থাকে প্রতি শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

#বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর :
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি রূপান্তর করা হয়েছে জাদুঘরে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক ও বাঙালি জাতির ইতিহাস বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। নিচতলায় দুটি কক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবনের সচিত্র প্রদর্শনী আর দ্বিতীয়তলার তিনটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও পারিবারিক জীবনের সচিত্র প্রদর্শনী আর দ্বিতীয়তলার তিনটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও পারিবারিক জীবনের সচিত্র প্রদর্শন। এছাড়াও জাদুঘরে আছে যুদ্ধকালীন পতাকা, মুজিবনগর সরকারের ডাকটিকিট, বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতারের ছবি, বিভিন্ন আন্দোলনের ছবি ও পেপার কাটিং এবং ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ছবি। বুধবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য ৫টাকা।

#রাজারবাগের চিরদুর্জয় ভাস্কর্য :
রাজারবাগ পুুলিশ লাইন চত্ব¡রে অবস্থিত চিরদুর্জয় ভাস্কর্য। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার বাহিনী রাজারবাগে পুলিশ ব্যারাক আক্রমণ করে প্রায় ২ হাজার বাঙালি পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র। ৯ মাসব্যাপী হত্যাযজ্ঞে রাজারবাগ পুলিশলাইন পরিণত হয় গণকবর আর বধ্যভূমিতে। নিহত পুলিশ শহীদদের স্মরণে পুলিশ লাইনে নির্মিত হয় চিরদুর্জয় ভাস্কর্য। একটি বেদির ওপর দাঁড়ানো পাঁচ যোদ্ধা। তারা কৃষক, শ্রমিক ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য। তাদের তিনজন রাইফেল হাতে, একজন ছুড়ছেন গ্রেনেড। আর একজন পতাকা হাতে যাচ্ছেন এগিয়ে। ভাস্কর্যটি মৃণাল হকের গড়া

মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য :
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও একাত্তরের গণহত্যা। একাত্তরের স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর সংঘটিত হয়েছিল এক অর্বণীয় নির্যাতন এবং গণহত্যা। তাই শহীদদের স্মরণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ নির্মাণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য। এটি উদ্বোধন করেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম খান। ভাস্কর্যটির একাংশের নাম মুক্তিযদ্ধের প্রস্তুতি আর অন্য অংশের নাম একাত্তরের গণহত্যা। ভাস্কর্যটিতে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি এবং পাক হানাদারদের নির্মম গণহত্যা তুলে ধরা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ভাস্কর্য :
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী। সে কথা মাথায় রেখে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ভাস্কর্য নির্মিত হয় ওসমানী উদ্যানে। ২৫ মার্চ ৭১ দখলদার পাকিস্তানি সৈন্যরা গণহত্যা শুরুর পর ২৬ মার্চ থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে ওঠে। সে মাসেই গোটা দেশকে ভাগ করা হয় ১১টি সেক্টরে। সেক্টরগুলোর নেতৃত্ব দেয়া হয় এক একজন সেক্টর কমান্ডারের হাতে। সেই সেক্টরগুলো ছিল অঞ্চলভিত্তিক বিভক্ত। ওসমানী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ভাস্কর্যে সাদা দেয়ালের মাঝখানে খচিত বাংলাদেশের মানচিত্র রয়েছে। আপনার সন্তান ওসমানী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ভাস্কর্য দেখে মুক্তিযুদ্ধের ধারণা পাবে।

সংগ্রহে: ডা.জাবির, বরিশাল।
সূত্র: যুগান্তর '
২৫/৩/২০১৪