আসুন দেখে নেই ঢাবির “ফর্ম পূরণ থেকে শুরু করে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত” সকল কিছুর বিস্তারিত তথ্য।
.
প্রথমেই বলে রাখি, ছবিটিতে লক্ষ করে দেখুন, সেখানে অনেকগুলো নাম্বার দিয়ে একেকটা বিষয়কে নির্দেশ করা হয়েছে। আমি প্রতিটি নম্বর উল্লেখ করে প্রতিটি বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছি।
প্রথমেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.du.ac.bd তে যেয়ে সেখানে সামনেই দেওয়া Admission নামের লিংকে ঢুকতে হবে। এরপর সেখানে নিজের HSC আর SSC এর রোল নম্বর প্রবেশ করিয়ে লগ ইন করতে হবে।
লগ ইন করলেই নিচের ছবিটির মতো করে আপনার নিজস্ব একটি পারসোনাল ড্যাসবোর্ড ওপেন হয়ে যাবে যেখানে আপনার সকল তথ্য আগে থেকেই দেওয়া থাকবে যা ঢাবি আপনার শিক্ষাবোর্ড থেকে কালেক্ট করে রেখেছে আগে থেকেই। আর তা দেওয়া না থাকলে সেখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করে ফেলতে পারবেন টাইপ করে। নিচের ছবিতে মার্ক করা ৯ নম্বর পয়েন্টের মতো।
এবার ৯ নম্বর পয়েন্টের শেষ অংশে দেখুন বাছাইকৃত কোটা অপশন, সেখানে আপনার কোটা থাকলে সেখানে ক্লিক করে আপনি আপনার নির্দিষ্ট কোটা টি সিলেক্ট করে ফেলতে পারবেন, অন্যথায়, সেখানে কোটা প্রযোজ্য নয় দেখাবে।
এবার ১০ নম্বর পয়েন্টে লক্ষ্য করুন, সেখানে একটি ছবি আপলোড করতে হবে। কীভাবে আপলোড করবেন? ফেসবুকে যেভাবে আপলোড করেন সেভাবেই। এখন আপনার কম্পিউটারে বা মোবাইলে যদি আপনার ফরমাল ছবি না থাকে তাহলে ওয়াশ করা ছবিটি স্ক্যান করে নিতে হবে বা যেখান থেকে ছবিটি তুলেছিলেন সেখান থেকে ম্যানেজ করে ছবিটি পেনড্রাইভে বা মোবাইলে নিয়ে নিতে হবে। তারপর তা আপলোড করতে হবে। মনে রাখবেন, ওয়াশ করা ছবিটা কে মোবাইলের বা অন্য কোনো ক্যামেরা দিয়ে তুলে সেটা আপলোড দেওয়া উচিত হবে না কারন এতে ছবিটি যথেষ্ট পরিমানে স্পষ্ট আসবে না। গতদিনের মতো আবারও বলছি, ছবি হতে হবে স্পষ্ট, ভদ্র। কলেজ ড্রেস না পরা ছবি হলেও সমস্যা নাই। যারা হিজাব করেন তাদেরও মখমন্ডল টা ছবিতে দেখাতে হবে এবং কানসহ। আবারও বলছি, #কানসহ_স্পষ্টভাবে_দেখাতে_হবে । কারণ গতোবার এই বিষয় নিয়ে অনেকেই ভোগান্তির স্বীকার হয়েছেন। কারন পরীক্ষার হলে আপনার ছবির সাথে আপনার মুখমন্ডল মিলিয়ে দেখা হবে। আবেদনের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছবিটি আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন।
এবার ব্যাক্তিগত তথ্য ও ছবির কাজ শেষ হয়ে গেলে আপনি ছবিটির নিচে লক্ষ করুন ১২ নম্বর পয়েন্টে। সেখানে আপনি দেখতে পারবেন আপনি কোন কোন ইউনিটে আবেদন করার যোগ্য। যে যে ইউনিটে আবেদন করতে পারবেন সেই সেই ইউনিটের বিবরণ ছবিতে দেওয়া “আবেদনের অবস্থান” স্থানটিতে দেখতে পাবেন।
এবার ১ নম্বর পয়েন্টটি দেখুন। ভালো করে দেখুন, চ ইউনিটের পাশে ‘আবেদন” নামের বেগুনী রঙের একটি অপশন আছে। এরকম প্রতিটি ইউনিটের পাশেই এই অপশন থাকবে। যেই যেই ইউনিটে আবেদন করবেন সেই সেই ইউনিটের “আবেদন” লেখাটির উপরে ক্লিক করুন। ক্লিক করলেই সেখানে সবুজ রঙের একটী টিক চিহ্ন চলে আসবে। গ ইউনিট, ঘ ইউনিট ও আই বি এ এর ঘরে যেমনটি আছে। এরমানে এই ড্যাশবোর্ডটি যার, তিনি গ, ঘ ও আই বি এ এর জন্য আবেদন করেছেন।
এবার ২ নম্বর পয়েন্টে পে স্লিপের দিকে লক্ষ্য করুন। যেই যেই ইউনিটে আবেদন করলেন সেই সেই ইউনিটের জন্য পে স্লিপ ডাউনলোডের অপশন থাকবে। এখন প্রশ্ন হলো পে স্লিপ কি?
পে স্লিপ হচ্ছে এমন একটি পেজ যা আপনি ডাউনলোড দিয়ে তা প্রিন্ট দিবেন। দেখবেন সেখানে দুইটি অংশ থাকবে। একটি আপনার অংশ ও একটি ব্যাংকের অংশ। সেখানে যে ব্যাংকের নাম লেখা থাকবে সেই ব্যাংকের আপনার নিকটস্থ যেকোনো শাখায় সেই স্লিপটি নিয়ে যাবেন আর স্লিপে যতো টাকা লেখা থাকবে তা ব্যাংকে জমা দিয়ে দিবেন। বাকি কাজ ব্যাংক করে নিবে। সেই স্লিপে সিল মেরে সই দিয়ে, আপনার অংশটি আপনাকে দিয়ে দিবে আর ব্যাংকের অংশটি ব্যাংক রেখে দিবেন। আপনি যে টাকা জমা দিলেন সেটার প্রমাণ হিসেবে সেই স্লিপের অংশটি আপনার কাছে রেখে দিবেন।
এখানে বলে রাখি, প্রতিটা ইউনিটের জন্য যেহেতু আলাদা আলাদা স্লিপ, তাই টাকাটাও আলাদা আলাদা ভাবে দিতে হবে। মনে করেন কোনো ইউনিটে আবেদন করলেন, কিন্তু পরে ভাবলেন পরিক্ষা দিবেন না। তাহলে সেই টাকা টা জমা দিবেন না তাহলেই হইলো। মানে প্রতিটা ইউনিটের হিসাব আলাদা।
এবার ৩ নম্বর পয়েন্টে পেমেন্ট অংশের দিকে দেখুন। আপনি যে টাকা টা ব্যাংকে দিয়েছেন সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছালো কি না সেটা কি করে বুঝবেন? এজন্য আপনাকে ৪৮ ঘন্টা বা দুই দিন অপেক্ষা করতে হবে। যদি পেমেন্টের ঘরে সবুজ রঙের টিকচিহ্ন আসে (ছবিতে দেওয়া গ ও ঘ ইউনিটের মতো) তারমানে আপনার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছিয়ে গেছে এবং আপনার আবেদন করা সঠিকভাবে হয়ে গেছে। কিন্তু যদি সবুজ রঙের টিক চিহ্ন না আসে? যদি আপনি ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা না পৌছিয়ে থাকে? তখন সেই সবুজ চিহ্নের যায়গায় আপনি “জমা দাবি” নামের অপশনটি দেখতে পাবেন। এটির মানে আপনি দাবি করছেন যে আপনি টাকা জমা দিয়েছেন কিন্তু এখানে সেটা দেখাচ্ছে না। মূলত এধরণের ভুল খুব একটা হয়না তাই আমার জানা নেই এক্ষেত্রে কি করণীয় আছে। যদি এমনটি হয় তাহলেও চিন্তার কোনো কারণ নাই। জমা দাবি অপশনে ক্লিক করলে সেখানেই বলে দেওয়া থাকবে কি করা লাগবে। সবচেয়ে ভালো হয় নিজে সশরীরে ঢাবিতে এসে রেজিস্টার বিল্ডিং এর দ্বিতীয় তলায় ২১৪ নং রুমের ভর্তি অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করা।
এবার ৪ নং পয়েন্টে দেখুন। আবেদন প্রক্রিয়ার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয় একটি একটি করে ইউনিটগুলোর প্রবেশপত্র গুলো ছেড়ে দিবে। তখন আবার আপনার রোল নম্বর দিয়ে লগ ইন করে আপনার ড্যাশবোর্ডে ঢুকে সেখানে প্রবেশপত্র (৪ নং পয়েন্ট) এর সারিতে প্রবেশপত্রটি ডাউনলোডের অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করে তা ডাউনলোড করে ফেলুন এবং তা একাধিক কপি প্রিন্ট দিয়ে নিন, যেন ভবিষ্যতে হারিয়ে গেলেও আপনি বিপদের না পরেন। মনে রাখবেন, আপনি চান্স পেলে এই প্রবেশ পত্র ২০১৮ সালের মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে দরকার পরবে। যদিও সব জায়গায় ফটোকপির দরকার পড়বে তারপরেও একাধিক মেইন কপি হাতে রাখা ভালো।
প্রবেশপত্র দেওয়া হয়ে গেলে, পরীক্ষার কয়েকদিন আগে সিট প্ল্যান দিয়ে দেওয়া হবে। (৫ নং পয়েন্ট) তাই আবার আপনার রোল নম্বর দিয়ে লগ ইন করে সেখানে “দেখুন” অপশনে ক্লিক করলেই আপনি আপনার সিট প্ল্যান দেখতে পাবেন, কোন জায়গা, কোন ভবন, কতো নম্বর রুম সব থাকবে। এমনকি গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আপনাকে দেখিয়ে দেওয়া হবে যে কীভাবে আপনার গন্তব্যে যাবেন।
এবার ৬ নং পয়েন্টে দেখুন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার মোটামোটি সাত দিনের মধ্যেই ফলাফল দেওয়া হয়। সেটা এই ফলাফল সেকশনে দেওয়া হবে। সেখানে “দেখুন” এ ক্লিক করলেই আপনি আপনার ফলাফল পেয়ে যাবেন। এরপর যদি পরীক্ষায় আপনি পাশ করেন তাহলে পরবর্তী স্টেপগুলো আপনার জন্য প্রযোজ্য, আর ফেল করলে সেই ইউনিটের সাথে আপনার সম্পর্ক সেখানেই শেষ।
পাশ করলে ৭ নং পয়েন্টে উল্লিখিত বিষয় পছন্দক্রম দিতে হবে। মানে সেখানে ‘দিন’ এ ক্লিক করে আপনি আপনার পছন্দের বিষয়গুলো ১ থেকে শেষ পর্যন্ত সাজাবেন। এমন সি বা ডি ইউনিটের জন্য এক নম্বরে একাউন্টিং দিলেন, দুই নম্বরে ফিন্যান্স দিলে, তিন নম্বরে মার্কেটিং দিলেন, এভাবে।
এবার তার কিছুদিন পরে আপনাকে আপনার বিষয় সিলেক্ট করে দেওয়া হবে যে আপনি আগামী চার বছর কোন সাব্জেক্টে পড়বেন। পরবর্তীতে ভর্তির সময় এটা মাইগ্রেশন করে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী পরিবর্তন করার সুযোগ পায় মেধার ভিত্তিতে।
বিষয় সিলেক্ট করে দেওয়ার পরে আপনার অনলাইনের কাজ শেষ। এরপরে যা হবে তা ডাইরেক্ট ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ করে করতে হবে। যেমন ভর্তি, টাকা জমা ইত্যাদি। সেগুলো পরে সিলসা থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
কবে থেকে ফর্ম পূরণ শুরু হবে এবং কবে শেষ হবে সেটা নির্দিষ্টভাবে সার্কুলার ছাড়লে বোঝা যাবে। আশা করছি অতি শীঘ্রয়ই প্রোসেস শুরু হয়ে যাবে।