ইরানের সাথে পারমানবিক চুক্তি থেকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহার করে
নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে এক সাংবাদিক
সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। একই সাথে ইরানের
উপর পারমাণবিক এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা
আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তার এই
ঘোষণাকে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী
সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত
(ইউএই) এবং ইসরাইল স্বাগত জানিয়েছে। তবে
হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে ইউরোপে
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর নেতারা। খবর
বিবিসি ও সিএনএন’র।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ
বরেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় ইরান চুক্তি
নিঃশেষ হয়ে যায়নি। ট্রাম্পের ঘোষণায় উদ্বেগ
প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা
ট্রাম্পের ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করে
বলেছেন, এটি মারাত্মক ভুল। এই ঘোষণায় বিশ্বে
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে। ২০১৫
সালে বিশ্বের বৃহত্ শক্তিগুলো যুক্তরাষ্ট্র,
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং জার্মানি
পারমাণবিক চুক্তি করেছিল ইরানের সাথে।
বারাক ওবামা তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ছিলেন। এই চুক্তির মুল বিষয় ছিল, ইরান পরমাণু
কার্যক্রম বন্ধ রাখবে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু
শক্তি কমিশন ইরানের যে কোন পরমাণু স্থাপনায়
যে কোন সময় পরিদর্শন করতে পারবে। অর্থাত্
ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না
পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানকে
নজরদারির মধ্যে রাখতে পারবে। এর বিনিময়ে
ইরানের উপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে
নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের মতে, এই
চুক্তিতে ত্রুটিপূর্ণ এবং একপেশে। ইরানের
সাথে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র যাতে সরে
না যায় সেজন্য ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি
ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু
তাতে সাড়া দেননি ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইউরোপের পক্ষ থেকে এ
চুক্তি বজায় রাখার জন্য ইরানকে আহবান
জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
থেরেসা মে, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা
মের্কেল এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল
ম্যাক্রোঁ এক যৌথ বৃিতিতে আরো বলেছেন,
ইউরোপের পক্ষ থেকে এ চুক্তি বজায় রাখা হবে।
তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের
প্রতিক্রিয়ায় আমরা ইরানকে সংযম প্রদর্শনের
আহবান জানাই। এ চুক্তির আওতায় ইরানের দিক
থেকে যেসব বাধ্যবাধকতা আছে, সেগুলো তারা
যেন অবশ্যই মেনে চলে। রাশিয়া বলেছে,
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত দুই কোরিয়ার
শান্তি প্রক্রিয়াকে সন্দেহের দিকে ঠেলে
দিয়েছে।
এ চুক্তি বাতিলের ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ
করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয়
ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রেডরিকা
মঘেরিনি বলেছেন, ইরান যতক্ষণ পর্যন্ত এ চুক্তির
বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ততক্ষণ পর্যন্ত ইউরোপীয়
ইউনিয়ন এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পূর্ণ সমর্থন
দিয়ে যাবে। জাতিসংঘের মহাসচিব
অ্যান্টোনিও গুতেরেস ট্রাম্পের ঘোষণায় গভীর
উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চুক্তি থেকে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের ঘোষণায় সাবেক
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, এ
ধরনের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে তার মিত্রদের
কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে।
অন্যদিকে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের
সরে আসার ঘোষণায় ইরান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
দেখিয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি
বলেছেন, তিনি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ
পুনরায় শুরু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি
বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দেখিয়েছে যে তারা
নিজেদের প্রতিশ্রুতির কোন মর্যাদা রাখে না।
ইরান কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করবে এবং এ
চুক্তির পক্ষে যেসব মিত্র দেশগুলো আছে,
তাদের সাথে কথা বলা হবে। সব কিছু ইরানের
জাতীয় স্বার্থের উপর নির্ভর করবে। তবে
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল, সৌদি
আরব ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছে।
কঠোর সমালোচনা ওবামার
ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর উত্তরসূরী
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড
নিয়ে তেমন কোনো কথা বলেননি সাবেক
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু তার সময়ে
করা ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার
করে নেওয়ার ঘোষণায় মুখ খুলেছেন তিনি।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে
তিনি বলেছেন, ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে
আসা একটি গুরুতর ভুল পদক্ষেপ। এতে বিশ্বব্যাপী
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে। বার্তা
সংস্থা এপি’র খবরে বলা হয়েছে, ওবামার মতে,
ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বিশ্বের বৃহত্ শক্তিগুলোর
সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি উদ্ভট পরিস্থিতিতে
ফেলবে। তিনি আরো বলেন, ইরানের সাথে
পরমাণু চুক্তি ভালোভাবেই কাজ করছিল। এই
চুক্তিই বলে দিয়েছে যে কিভাবে কূটনৈতিক
কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়। এমনকি উত্তর
কোরিয়ার ইস্যুটি যখন সামনে চলে আসে।
Home
Preliminary Preparation
Recent Update
Written Preparation
ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি প্রত্যাহার