Dream to BCS

Think positive, Be positive, Do positive

এক নজরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: ১

এক নজরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১
-
**ওজন তিন দশমিক ৭ মেট্রিক টন
** মহাকাশে অবস্থান করবে ১৫ বছর
** সর্বমোট খরচ ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা
** সরকারি অর্থ ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ
টাকা, বিদেশি অর্থায়ন ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪
লাখ টাকা
** নিজস্ব কক্ষপথ ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে
স্থাপন করা হবে
** স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০
দিন লাগবে
** গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা
হয়েছে গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির
বেতবুনিয়ায়
,
পৃথিবী হইতে প্রায় ৩৬
হাজার কিলোমিটার দূরে নূতন একটি কৃত্রিম
উপগ্রহ প্রদক্ষিণ করিবে এই ধরণীকে। ইহা এক
ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ। কারণ এই কৃত্রিম
উপগ্রহটি একান্তই আমাদের। কৃত্রিম উপগ্রহ
বঙ্গবন্ধু-১। সব কিছু ঠিক থাকিলে ১০ মে
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বিকালবেলা
মহাকাশে আসন পাতিবে আমাদের নিজস্ব এই
স্যাটেলাইট। বাংলাদেশ সময় ১১ মে’র প্রথম
প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে মহাকাশে
পৌঁছাইয়া দিতে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু-১
স্যাটেলাইট লইয়া জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার
কক্ষপথে ছুটিবে ফ্যালকন-৯ রকেটের ব্লক ৫
সংস্করণ। ইহার মাধ্যমে স্যাটেলাইটের
অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসাবে গৌরবের
আসন দখল করিবে বাংলাদেশ। সাড়ে তিন
হাজার কিলোগ্রামের জিওস্টেশনারি
কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উেক্ষপিত
হইবে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টারের
ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স-৩৯ হইতে। জানা
যায়, এই লঞ্চ কমপ্লেক্স হইতেই ১৯৬৯ সালে
ঐতিহাসিক চন্দ্রাভিযানে রওনা হইয়াছিল
অ্যাপোলো-১১। সফলভাবে উেক্ষপণের পর
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে
আসিবে প্রায় ২০ দিন পর। অতঃপর,
স্যাটেলাইটটি সম্পূূর্ণরূপে চালু হইবার পর ইহার
নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরিত হইবে বাংলাদেশের
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির
বেতবুনিয়ায় গ্রাউন্ড স্টেশনে।
আমাদের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহের তাত্পর্য যে
সুদূরপ্রসারী তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই।
মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব অবস্থানের
প্রথম স্বপ্ন দেখিয়াছেন আমাদের
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন
বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র
উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু। মহাকাশে নিজস্ব
অবস্থানের দূরদর্শী স্বপ্ন তিনি দেখিয়াছিলেন
আজি হইতে ৪৩ বত্সর পূর্বে। বঙ্গবন্ধুকে
নৃশংসভাবে হত্যার পর পদ্মা মেঘনা যমুনা দিয়া
অনেক পানি বহিয়া গেলেও আমাদের নিজস্ব
কৃত্রিম উপগ্রহ অধরাই থাকিয়া গিয়াছিল। অথচ
এই সময়ের মধ্যে উপমহাদেশে ভারত উেক্ষপণ
করিয়াছে বিপুল সংখ্যক স্যাটেলাইট। এমনকি
নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ রহিয়াছে শ্রীলঙ্কারও।
অথচ আমাদের জন্য একটি নিজস্ব কৃত্রিম
উপগ্রহের প্রয়োজনীয়তা ছিল অনেক বেশি।
কারণ আমাদের এই ভূখণ্ডে প্রাকৃতিক দুর্যোগ
আঘাত হানে বারংবার এবং তাহাতে সর্বাধিক
ক্ষতিসাধন ঘটে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের।
তাহারা শুধু যথাযথ সময়ে দুর্যোগের প্রকৃত
পূর্বাভাসের অভাবে বহুক্ষেত্রে আসন্ন বিপদ
হইতে রক্ষা পাইবার প্রস্তুতি লইতে পারে না।
ফলে, প্রাণহানি ঘটে তুলনামূলক অনেক বেশি।
নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকিলে দুর্যোগ-
দুর্বিপাকের সময় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ
ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অনেক সহজ হয়। অন্যদিকে
প্রত্যন্ত অঞ্চলে হ্রাসকৃত এবং নামমাত্র মূল্যে
ব্রডকাস্টিং সেবা দেওয়া সম্ভব হইবে। ইহাতে
টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-গবেষণা, ভিডিও
কনফারেন্স, প্রতিরক্ষা ও বিপদাপন্ন অবস্থায়
জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখিতে
পারে নিজস্ব স্যাটেলাইট।
নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ অনেক ব্যয়বহুল নিশ্চয়ই।
কিন্তু তাহার বিনিময়ে যাহা পাইব, তাহার মূল্য
আরো অনেক বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশ
বত্সরে স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ খরচ করিতেছে
এক কোটি ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে
স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ ১৫ বত্সরে বাংলাদেশ
হইতে বিদেশে চলিয়া যাইবে ২১ কোটি মার্কিন
ডলার। অথচ নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ অর্জনে
আমাদের বাড়তি ব্যয় করিতে হইতেছে মাত্র তিন
কোটি মার্কিন ডলার। জানা গিয়াছে, বঙ্গবন্ধু
স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকিবে,
যাহার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য
রাখা হইবে এবং বাকিগুলি ভাড়া দিয়া অর্জন
করা সম্ভব হইবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের এই ঐতিহাসিক
শুভযাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট
সকলকে জানাই অভিনন্দন।
,
সরকারের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে, বর্তমানে
বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪
মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
উেক্ষপণের পর সেই অর্থ সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো বিদেশি
স্যাটেলাইট থেকে বর্তমানে সেবা নিচ্ছে। যার
পেছনে এই বিপুল পরিমাণ ডলার বাইরে চলে
যাচ্ছে। এই স্যাটেলাইট উেক্ষপণ হলে সেই অর্থ
দেশেই থেকে যাবে। উল্টো বিদেশে ভাড়া
দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনা সম্ভব হবে
বলেও জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড.
শাহজাহান মাহমুদ।
পাঁচ হাজার কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন
নিয়ে ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট
কোম্পানি লিমিটেড’ গঠন করা হয়েছে। এই
কোম্পানি স্যাটেলাইটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব
পালন করবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প
ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন
সংস্থার (আইটিইউ) ‘রিকগনিশন অফ এক্সিলেন্স’
পুরস্কারও পেয়েছে।
বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ
১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, সেই অর্থ সাশ্রয় হবে।
বিদেশে ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে
আনাও সম্ভব হবে।