Dream to BCS

Think positive, Be positive, Do positive

Clash of Civilization/ সভ্যতাসমুহের সংঘাত

বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি
ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনস/ সভ্যতাসমুহের সংঘাত:
লিখেছেন :Yeanur Rahman
**********************************
শৈশবে বিশ্বরাজনীতির সাথে পরিচিতির প্রথম দিকেই স্যামুয়েল হান্টিংটনের আলোড়নকারী মাস্টারপিস " দি ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন্স---- রেমেকিং অব ওয়ার্ল্ড অর্ডার" বইটির আলোচনা নজরে এসেছিল।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিউজউইক, টাইমস, ইকোনোমিস্ট, টাইমে ম্যাগাজিনসমুহ পড়ার সময়ে বহুবার হান্টিংটন ও তার বইটির বিষয়ে উল্লেখ পেয়েছি।
সবশেষে বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার আগে আরো একবার হান্টিংটনকে পড়তে হয়েছিল। কয়েকটি বিসিএসে "ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন্স" তত্ব নিয়ে প্রশ্ন আসার প্রেক্ষাপটেই এটা বিসিএস আন্তর্জাতিক পার্টের সিলেবাসের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠে। উইকিপিডিয়া থেকে তত্বটি সম্পর্কে মোটামুটি একটা বার্ডস আই ভিউ নিয়ে শেষ হয় বইটির সাথে আমার ফ্লার্টেশনের একটা লং সিরিজ।
কিছুদিন আগে বইটির সফটকপি ডাউনলোড করে পড়তে শুরু করি। কি আছে এই তত্বে যা সারাবিশ্বে সব বুদ্ধিবৃত্তিক কোয়ার্টারে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছিল, যা সারা দুনিয়ায় বহু দশক ধরে প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার তত্বসমুহকে চ্যালেঞ্জের মুখে ছুড়ে দিয়েছিল। পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে আমেরিকান নিও-কনজার্ভেটিভ, রাইট-উইংগার, খৃস্টীয় গ্রুপসমুহ হান্টিংটনের তত্বকে গোগ্রাসে লুফে নিয়েছিল, কিন্তু নন-পশ্চিমা বিশ্বের খ্যাতনামা তাত্বিক ও দার্শনিকেরা এই তত্বের মধ্যে পশ্চিমা ও নন-পশ্চিমা জগতের মধ্যে বিভেদের বীজ বপনের একটা ষড়যন্ত্র দেখেছিলেন। বিশ্বখ্যাত লেখক এডওয়ার্ড সাইদ, ভারতীয় লেখক বন্দনা শিভা থেকে শুরু করে লেফট-লিনিং তাত্বিক ও একক্টিভিস্টরা তত্বটিকে স্ট্রং টার্মসে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
যাই হোক তত্বটিকে প্রকাশের ২৫ বছর পরে আমি যখন বইটি পড়তে শুরু করে, আমি শুধুই অবাক হয়েছি। এই জন্যে যে, হান্টিংটন কত নির্ভুলভাবে বিশ্বরাজনীতির গতিপ্রকৃতিকে ভবিষৎবাণী করেছিলেন।
১৯৯৩ সালে আমেরিকার বিখ্যাত ফরেন এফেয়ার্স সাময়িকীতে হান্টিংটন Clash of civilizations? নামে একটি আর্টকেল লিখেছিলেন। প্রকাশের পরপরই আর্টিকেলটি সারা বিশ্বের চিন্তক ও বিদগ্ধ সমাজে আলোচনার লাইমলাইটে চলে আসে। ১৯৯৬ সালের দিকে ফরেন এফেয়ার্সের এডিটর মন্তব্য করেন যে ১৯৪০-এর দশকের পর আর কোন কিছু নিয়ে এত বেশি আলোচনা হয়নি। তাদের সমস্ত প্রকাশনা মিলেও এত বেশি রেস্পন্স তৈরি করতে পারেনি।
১৯৯৬ সালের দিকে হান্টিংটন উপলব্ধি করেন যে তার এই চরম আলোচিত আর্টিকেলটির বক্তব্যসমুহ বিস্তৃত মাত্রায় ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন। এরই প্রয়োজনে লিখে ফেলেন ৬৫০ পৃষ্ঠার এইই বইটি। শেষের দিকে একশত পৃষ্ঠা লেগেছে শুধু রেফারেন্সিং-য়ে।
হান্টিংটনের প্রস্তাবনা ছিল ভবিষ্যৎ-এর বৈশ্বিক রাজনীতির ভরকেন্দ্র হিসেবে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক আদর্শ তার জায়গা হারাবে, তার বদলে জায়গা নিবে ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা, মুল্যবোধ প্রভৃতি বিষয়সমুহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের কয়েক দশকে পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও একদলীয় কমিউনিজম প্রভৃতি দ্বৈত চিন্তায় আবিষ্ট থাকা বিশ্ববাসীর জন্যে হান্টিংটনের এই বক্তব্য ছিল বিনামেঘে বজ্রপাতের মত।
হান্টিংটন পৃথিবীকে বিভিন্ন সভ্যতার একটা মিক্স হিসেবে দেখেছেন। আমেরিকার নেত্রিত্বে পশ্চিমা বিশ্ব, চাইনিজ সভ্যতা, ভারতীয় সভ্যতা, মধ্যপ্রাচ্য ও নর্থ আফ্রিকার ইসলামী সভ্যতা প্রভৃতি সভ্যতার মধ্যকার সংঘাতই হবে ভবিষ্যৎ বিশ্বব্যবস্থার নিয়ামক শক্তি।
একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হবে ধর্ম, ভাষা, প্রভৃতি। নন-পশ্চিমা দেশে আধুনিকায়নের ফলে সেখানকার বাসিন্দারা ডিজ-অরিয়েন্টেড হয়েছে, জীবন দর্শনের অর্থবহ দ্যোতনা থেকে বিচ্যুত হয়ে তারা আবার ধর্মের দিকেই ফিরে আসছে।
ইসলামিক বিশ্বের মুসলমানেরা ইসলামের ভিতরেই নিজেদের অস্তিত্ব, পরিচয় খূজতে শুরু করেছে। হান্টিংটন মনে করেন মুসলমানদের এই ইসলামের দিকে টার্ন করা এবং মুসলিম দেশসমুহে জনসংখ্যা বৃদ্ধির উর্ধহার পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াবে। মুসলিম দেশসমুহে তরুণদের সংখ্যার ক্রমশ উর্ধগতির কারনে একবিংশ শতকের প্রথম দুটি দশকে প্রচুর সামাজিক সংকটের সৃষ্টি হবে। বিশ্বশক্তিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার কারনে ইস্লামিক বিশ্বের সাথে কনফ্লিক্টে লিপ্ত হবে পশ্চিমা বিশ্ব।
ঘুমন্ত ড্রাগন চাইনিজরা বৈশ্বিক রাজনীতিতে ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে উঠবে। অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে তারা পশ্চিমাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাবে।
হান্টিংটন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষের চিন্তাধারা সমপর্কে যে ব্যাপক জ্ঞান রাখতেন তা তার বই পড়লে বোঝা যায়। তিনি কোন কিছুর রাখঢাক বা করে বিভিন্ন সমাজের আন্ডারকারেন্টে যে ভাবনা-চিন্তা বিদ্যমান তা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন।
বর্তমান বিশ্বে হান্টিংটনের তত্বের সত্যতা ভুরি ভুরি। আমেরিকাতে খৃস্টীয় শক্তিসমুহ ধর্মের ক্যানভাসে সামনে চলে আসছে, ভারতে ধর্মভিত্তিক দলসমুহ খুব ভালো অবস্থানে চলে এসেছে, চাইনিজরা মাওসেতুং-য়ের বিপ্লববাদী স্লোগান থেকে সরে এসে কনফুসিইয়িজম-এর দিকে ঝুকে পড়ছে।
ইউরোপীয়রা বহু শতাব্দী ধরে খ্রিস্টান ধর্মের ছায়ায় থেকে বিশ্ব জয় করার পর আলোকায়ন যুগের দর্শনে ব্যাপ্টাইজড হয়। বর্তমানে ইউরোপীয়দের মধ্যে খৃস্টীয় চিন্তাচেতনার প্রতি এক রকমের নীরব এফিনিটি অনুভব করছে। ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধির সাথে সাথে ফ্লিং অব বিং খ্রিস্টান চেতনা যে জাগ্রত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।