‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ একটি উন্নয়ন কৌশল ও কাঠামো। ঐতিহাসিক ‘সিল্ক রোড’কে পুনরুজ্জীবিত করে ভূমি-ভিত্তিক ‘সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট' (এসআরইবি) এবং সমূদ্রগামী ‘মেরিটাইম সিল্ক রোড' (এমএসআর) নিয়ে চীনের সাথে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের অন্তত ৭০টি দেশের জলে ও স্থলে সংযোগ স্থাপনের (কানেকটিভিটি) মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ, সহযোগিতা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে’র কাঠামো গঠিত হবে।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক নীতিগবেষণা প্রতিষ্ঠান লোয়ি ইনস্টিটিউটের গবেষক পিটার কাই (Peter Cai) বলছেন, ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড বা ‘এক অঞ্চল এক পথ’ প্রকল্প আসলে চীনের অর্থনীতির জট কাটানোর মহাউদ্যোগ। এই জট তিনটি জায়গায়: প্রথমত, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা জিংজিয়াং প্রদেশকে এগিয়ে নেওয়া, দ্বিতীয়ত চীনের অলস পুঁজিকে বিশ্বব্যাপী লাভজনক বিনিয়োগে খাটানো এবং তৃতীয়ত, চীনের অতিরিক্ত শ্রম, কারখানা ও উৎপাদিত পণ্যকে বিদেশে রপ্তানি করা। ক্রমেই শ্লথ হয়ে আসা চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আগের গতিবেগে রাখতে চাইলে এই তিন জায়গায় তাদের সফল হতে হবে। এই জন্যই এ ব্যবস্থা ।
ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডকে সংক্ষেপে ‘ওবর’ অথবা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ইনিশিয়েটিভও বলা হয়। ২০১৩ সালে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং । এরপর থেকে এই উদ্যোগকে ঘিরেই চলছে দেশটির অর্থনৈতিক কূটনীতি। এটাকে চীন সম্মিলিত উন্নয়নের ‘চীনা স্বপ্ন’ বলে বর্ণনা করছে। অনেকে একে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ' (টিপিপি) এবং ‘ট্রান্স আটলান্টিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশিপ' (টিটিআইপি) চুক্তির বিকল্প হিসেবে আখ্যা দিতে চেয়েছেন।
এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইটি) নামে চীনের নেতৃত্বে ১০ হাজার কোটি ডলারের মূলধনে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া চীন চার হাজার কোটি ডলারের সিল্ক রোড তহবিল গঠন করেছে। চীন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগিয়েছে। প্রকল্পটির ব্যাপারে চীনের সাথে ৪৪টি দেশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের সাথে জড়িত দেশগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্য ইতোমধ্যে ২০টিরও বেশি দেশ সফর করেছেন।
চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর যে লক্ষ্য বাংলাদেশের রয়েছে তা অর্জনে এটা ‘গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ’ নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৭ সালকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ‘বন্ধুত্ব ও আদান-প্রদানের’ বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট শি’য়ের ঢাকা সফরে ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ যোগ দেয়।
‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কী?
Tags
# International Affairs
# Written Preparation
Share This
Written Preparation
Labels:
International Affairs,
Written Preparation