সাধারন আলোচনা-
জলের উৎসের সঠিক ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ, সড়কের পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বিবিআইএন ভূমি বেষ্টিত (ল্যান্ড ব্লক) দেশ নেপাল ও ভুটান ভারত এর কলকাতা বন্দর, হলদিয়া বন্দর এবং বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর এর মধ্যে সংযুক্তি লক্ষ্য নিয়ে ১৪ মে ১৯৯৭ তারিখে গড়ে উঠে। ৮ জুন ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার বিবিআইএন মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট এর খসড়া তৈরি করে ও ১৫ জুন (২০১৫) ভুটান এর রাজধানী থিম্পুতে এই খসড়ার অনুমদন দেওয়া হয়।এই চুক্তি দ্বারা চারটি দেশ ওর যাত্রীবাহি,পন্যবাহি ও ব্যক্তিগত যানবাহন নির্দিষ্ট রুটে চলাচল করতে পাড়বে এবং সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে পারবে।
বিবিআইএন চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে-
বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল (বিবিআইএন)-এর মধ্যে মোটর ভেহিকল এগ্রিমেন্ট (এমভিএ) চুক্তির আওতাধীন ভারত-বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে ট্রাক, বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল সহজ হয়ে যাবে এবং এর ফলে এই অঞ্চলের অর্থনীতি, যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। দেশের উন্নয়নের জন্য অন্যদেশের সাথে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও যোগাযোগগত বন্ধন থাকা প্রয়োজন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে বলেন, "কিভাবে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং কুয়াকাটাকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন করিডোর প্রতিষ্ঠা করা যায় যাতে করে এর সম্ভবনাগুলোকে আরো কাজে লাগানো সম্ভব হয় সেজন্য ভুটান বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে"। এর ফলে আমাদের পর্যটন শিল্পেও ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। এই প্রকল্পের বড় সুবিধা হল- জলবিদ্যুৎ বিনিময়ের ফলে এ অঞ্চলের জন্য বিদ্যুৎ খাতে গেম চেঞ্জার হিসেবে এই প্রজেক্ট বিবেচিত হবে।
ভুটানে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে, সেই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে তিনটি দেশেই যাবে। আন্তদেশীয় বাণিজ্য ঘাটতি দূর করে এই অঞ্চলের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে সমতা আনয়নের কাজ করবে। বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। যেমন- বাংলাদেশের সফটওয়্যার কোম্পানি ইতোমধ্যেই ভুটানে কাজ করছে এবং তাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও বেশ ভালো।
বিবিআইএন সড়ক রুট-
***ভারত-বাংলাদেশ-ভারত রুটসম্পাদনা
১. কলকাতা - বনগাঁর কাছে পেট্রোপল - ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত - বেনাপোল - ঢাকা - আখাউরা - বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত - আগরতলা
২. আগরতলা - ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত - চট্টগ্রাম
৩. শিলচর - ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত-সিলেট - পাটুরিয়া ফেরি - বেনাপোল - ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত - বনগাঁ(পেট্রোপল) - কলকাতা
***ভুটান-ভারত-বাংলাদেশ রুটসম্পাদনা
১. সামদ্রুপ জংখার-ভারত ভুটান সীমান্ত- গোয়াহাটি-শিলং-ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত - তামাবিল - চট্টগ্রাম।
২. থিম্পু-ফুয়েস্টশোলিং-ভুটন ভারত সীমান্ত-জয়গাঁ-ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত-বুরিমারি-মাংল বা চট্টগ্রাম বন্দর।
***নেপাল-ভারত-বাংলাদেশ রুটসম্পাদনা
১. কাঠমান্ডু-কাকরভিটা-নেপাল ভারত সীমান্ত-শিলিগুড়ি-ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত-চট্টগ্রাম বা মাংল বন্দর।
ভাইবা বোর্ডে প্রশ্ন করতে পারে-
১) ভুটানকে ছাড়াই বিবিআইএন কেন হচ্ছে?
ভুটানের সংসদের উচ্চকক্ষ এখনো চার দেশের মধ্যে যান চলাচল চুক্তির অনুমোদন দেয়নি। তাই ভুটান এখনো এই চুক্তির আওতায় চার দেশের মধ্যে গাড়ি চলাচলের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই পুরো প্রস্তুতি নিয়ে পরবর্তীকালে ভুটান বিবিআইএন উদ্যোগে যোগ দিবে। আমি মনে করি (আপনি বলবেন), যারা ইচ্ছুক, তাদের নিয়েই যান চলাচল শুরু করে দেওয়া উচিত। পরে কোনো দেশ যদি আগ্রহী হয়, তাহলে এতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তাই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি), প্রটোকল ঠিক করে যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা দরকার। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে।
২) চার দেশের মধ্যে যান চলাচল চুক্তি নিয়ে বলুন?
উত্তর- বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি হয় ২০১৫ সালের জুন মাসে। ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে এ চুক্তি হয়। তারপর উপরের সাধারন আলোচনা থেকে কিছু কথা বলবেন। চুক্তির পরপরই এই পর্যন্ত দুটি পরীক্ষামূলক চালান গেছে। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে পরীক্ষামূলক চালান হিসেবে কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় গেছে ডিএইচএল এক্সপ্রেসের একটি চালান। কয়েক মাস পরে তৈরি পোশাকবাহী দুটি ট্রাক ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি গেছে।
৩) বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে সড়কপথে সরাসরি যান চলাচলের চুক্তি (এমভিএ) কোন প্রজেক্টকে মডেল ধরে আগাচ্ছে?
উত্তর- ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে
৪) বিবিআইএন মোটরযান চুক্তি ঝুলে গেছে কেন?
উত্তর-চুক্তি সইয়ের পাঁচ মাস পর বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মধ্যে মোটর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রায় দুই বছর কেটে গেলেও চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। বিবিআইএন যতটুকু এগিয়েছে, তা বাংলাদেশের আগ্রহেই। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতার অভাবে চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের তরফে সম্ভাব্য সব কিছুই করা হয়েছে। বাংলাদেশ চুক্তি অনুমোদনের পর খসড়া প্রণয়ন, প্রটোকলের খসড়া তৈরি, টোল নির্ধারণসহ যাবতীয় কাজ এগিয়ে রেখেছে।
৫) কেন নেপাল আর ভুটান বিবিআইএন অনুমোদনে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে?
উত্তর-বাংলাদেশ ও ভারত সরকার চুক্তিটি অনুমোদন করলেও নেপাল ও ভুটানের আপত্তিতে আটকে যায়। ১৩টি আপত্তি তুলে ভুটানের সংসদ চুক্তি অনুমোদন থেকে বিরত থাকে। দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষ গত বছরের নভেম্বরে পরিবেশ দূষণ ও ভুটানে সড়কের অপ্রতুলতার কারণ দেখিয়ে চুক্তিটি অনুমোদন করেনি। উচ্চ ও নিম্নকক্ষের যৌথ অধিবেশনেও অনুমোদন পায়নি। ভুটান জানিয়ে দেয়, তারা সরাসরি যান চলাচলের চুক্তিতে থাকবে না। তবে ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালকে চুক্তিটি এগিয়ে নিতে আহ্বান জানিয়ে পরবর্তীতে অংশ নেওয়ার কথা বলা হয় ভুটান সরকারের তরফে।
# ভূরাজনীতি # ভূঅর্থনীতি
***যে মানুষগুলো জীবনে সফল হয়েছে- তাদের অনেক ভালো গুন না থাকলে ও একটা শক্তি ছিলো, স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেবার শক্তি।
.
©Zenith Alom
Assistant Accountant General
BCS Audit & Accounts (Rec.)