Dream to BCS

Think positive, Be positive, Do positive

রুটিন বানানোর ইফেক্টিভ নিয়ম (For: University Examine)

অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করে, ভাইয়া রুটিন কিভাবে করবো? তাও আবার সামনে রোজার মাস। এর মধ্যে কীভাবে ইফেক্টিভলি পড়া যায়? এই পর্যন্ত অনেক জন আমাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করেছে। তাই আজ কিভাবে একটা ইফেক্টিভ রুটিন বানানো যায় সেটা বলার চেষ্টা করবো।

*****
তার আগে কিছু কথা না বললেই নয়। এতোদিন অনেক শান্তিতে চলেছো, যখন যা ইচ্ছা করেছো। একদিন রাত ১১ টায় ঘুমিয়েছো তো আরেকদিন ভোর ৪ টায়। কিন্তু এখন এরকম উরাধুরা নিয়মে চললে হবে না। একটা স্পেসিফিক রুটিন তাই এখন খুবই দরকার। এখানে কখন কোন কাজ করবা সব থাকতে হবে।

*****
রুটিন বানানোর মৌলিক উপাদান গুলো হলো সময়, পড়াশুনা ও অন্যান্য কাজের লিস্ট এবং রেস্ট। এই চারটার সমন্বয়েই গঠিত হয় রুটিন। একটা পারফেক্ট রুটিন বানানোর জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারো।

১. সবসময় এক সপ্তাহের জন্য রুটিন করবা। কারন এর কম সময়ের জন্য করলে টাইম নষ্ট হবে আবার এর চেয়ে বেশী দিনের সময়ের জন্য করলেও রুটিনটা ইফেক্টিভলি হবে না। কারণ এক সপ্তাহ পরে কখন কি হবে, না হবে তা কল্পপনাও করা সম্ভব না। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে কোন দিন কিরকম হতে পারে সেটারর একটা অনুমান করা যেতে পারে।

২. প্রতিদিনের রুটিন মোটেও একরকম হবে না। একেক দিন একেকটা প্রাইভেট থাকতে পারে, একেক সময়ে থাকতে পারে। তাই তোমাকে আগেই দেখতে হবে একটা সপ্তাহের রুটিন করার জন্য তোমাকে কয় ধরণের রুটিন করা লাগবে? এই যেমন ধরো, তোমার শনি, সোম, বুধ প্রতিদিন সকাল ৯ টায় ইংরেজি প্রাইভেট থাকে। আবার রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি তে বিকালে আরেকটা কোচিং বা প্রাইভেট থাকে। তাহলে তোমাকে মোট তিন ধরণের রুটিন বানাতে হবে। একটা হচ্ছে শনি বারের দিন গুলোর জন্য, আরেকটা রবি বারের দিন গুলোর জন্য আর আরেকটা শুক্রবারের জন্য।

৩. এখন যে দিনের রুটিন টা করবা সেই দিনের প্রতিটা কাজ লিখে ফেল খাতায়। একটা লিস্ট বানাও যে কি কি করবা একটা দিনে। যেমন-

ঘুম
প্রাইভেট
পড়া
কোচিং
ইফতার
ফেসবুকিং
আবার পড়া
এই গ্রুপে এসে স্টাডি করা
সেহেরি

৪. এবারের কাজ হলো তোমাকে খুজে বের করতে হবে যে সারাদিনে তুমি কখন কখন কতো ঘন্টা পড়তে পারবা। এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে প্রতি দুই ঘন্টা পর পর যেন ৩০ মিনিটের একটা ব্রেক থাকে।
যেমন এভাবে করা যেতে পারে-

সকাল-
১১.০০-১১.৩০- ফ্রেশ হওয়া
১১.৩০ - ১.৩০ - স্টাডি - ২ ঘন্টা
১.৩০-১.৪৫ - নামাজ
১.৪৫ - ৫.৩০ - প্রাইভেট/ কোচিং (যাওয়া আসা সহ)
৫.৩০-৬.৩০ - স্টাডি ১ ঘন্টা
৬.৩০-৮.০০ - ইফতার ও নামাজ
৮.০০- ১০.০০ - স্টাডি ২ ঘন্টা
১০.০০-১০.৩০ নামাজ
১০.৩০-১১.৩০ - গ্রুপে এসে স্টাডি ১ ঘন্টা
১১.৩০- ১.৩০ - স্টাডি ২ ঘন্টা
১.৩০-২.০০- রেস্ট
২.০০-৩.০০ - স্টাডি ১ ঘন্টা
৩.০০-৪.০০ সেহেরি ও নামাজ
৪.০০- ১১.০০ - ঘুম

সুতরাং এভাবে করলে তুমি মোট ৮ ঘন্টা টেবিলে এবং ১ ঘন্টা গ্রুপে পড়াশুনা করবা। যা পারফেক্টলি করলে আর কিছু লাগবে না চান্স পেতে।

৫. এবার তোমার পড়ার সময়গুলো আবার আলাদা করে লিখে নাও। উপরের উদাহারন থেকে বললে এভাবে-

১১.৩০-১.৩০ - ২ ঘন্টা
৫.৩০ - ৬.৩০ - ১ ঘন্টা
৮.০০ - ১০.০০ - ২ ঘন্টা
১০.৩০-১১.৩০ - ১ ঘন্টা (গ্রুপ)
১১.৩০-১.৩০ - ২ ঘন্টা
২.০০ - ৩.০০ - ১ ঘন্টা

৬. এবার প্রতিটা সাব্জেক্টের জন্য সময়গুলো ভাগ করে নাও। যেমন:

১১.৩০-১২.৩০- vocabulary, idioms phrase, prepositions
১২.৩০-১.৩০ - english grammar
রাত ৮.০০- ৯.০০ - বাংলা
৯.০০-১০.০০- তোমার বিভাগের কোন একটা সাব্জেক্ট যেমন- ম্যানেজমেন্ট বা physics বা gk
১১.৩০-১২.৩০ - আরেকটি সাব্জেক্ট
১২.৩০-১.৩০ অন্য আরেকটি সাব্জেক্ট
২.০০-৩.০০ - গ্রুপের বিভিন্ন টেস্টের হোমওয়ার্ক।

এগুলা শুধু উদাহারণ দিচ্ছি বুঝানোর জন্য। কেউ আবার এগুলাকেই হুবুহু কপি মেরে follow করতে যেও না। তাহলে লাভ নাই। নিজের অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে নিজে প্রস্তুত করবা।

৭. প্রতিটা সাব্জেক্টের জন্য সময় বরাদ্দ হয়ে গেলে এবার তুমি আরেকটি কাজ  করতে পারো। মনে করো কোন একটি সাব্জেক্টের জন্য সময় বরাদ্দ করেছো ১ ঘন্টা। তুমি এটাও প্ল্যানিং করে ফেলতে পারো যে তুমি কতো মিনিটে কয়টি পেজ পড়বা বা প্রতিটা টপিক পড়তে তোমার কতক্ষণ লাগবে বা ওই ১ ঘন্টা সময়ের মধ্যে ঠিক কতোটি টপিক পড়বা। এভাবে টার্গেট করে নিতে হবে। এই ধাপটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

*****
আরেকটা বিষয় হলো, রুটিন বানানোটা যতটা সোজা, রুটিন টা মেইনটেন করাটা ঠিক ততোই বেশি কঠিন। যার কারণে একটা রুটিন বেশিদিন স্থায়ী হয়।। দুই দিন পর পর নতুন করে রুটিন বানাতে হয়, নতুন করে প্ল্যানিং করতে হয় আবার। তাই এতে সময় অনেক বেশী নষ্ট হয় কেননা রুটিন বানাতেও সময় লাগে।
তাই চেষ্টা করবা রুটিনটা কখনোই যেন ব্রেক না হয়। মানে তুমি যেন কোনমতেই তোমার প্ল্যানিং থেকে সরে না আসো।যেমন ধর আজ সকালে তোমার ভোকাবুলারি পড়ার প্ল্যান ছিল C থেকে D পর্যন্ত সবগুলো। কিন্তু সেই সময়েই হয়তো তোমার বন্ধু/বান্ধবী বাজারে যাবে ঈদের কেনাকাটা করতে। না। যাওয়া যাবে না। যতোই কষ্ট হোক, থেকে যেতে হবে বাসায়। যেটা প্ল্যান ছিল সেটাই করতে হবে।

*****
একটা কথা মনে পরে গেল। সেটা বলে শেষ করছি। ১৩ সেপ্টেম্বর, কোরবানি ঈদ এর একটি ঘটনা। তার কিছুদিন পরেই মানে ৩০ তারিখে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, ঢাবির গ ইউনিটে। আমাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হতো ২৭ তারিখ। তাই আমার হাতে সময় আর খুব বেশী হলেও ১৪ দিন। ইশ!! ঈদটা এমন সময় পরলো!! যাই হোক, আমি তখন একটা ছকের মধ্যে আছি, স্পেসিফিক প্ল্যানিং এর মধ্যে, আমার টার্গেট কিরকম ছিল সেটা আমার এখনো মনে আছে-
১৩,১৪,১৫,১৬- engliish a to z
১৭-১৮ - বাংলা a to z
১৯, ২০ - ম্যানেজমেন্ট
২১-২২ - ফিন্যান্স
২৩-২৪-২৫ - একাউন্টিং
২৬-২৭ আবারও ইংরেজি।

আমার প্ল্যান মোতাবেক আমি ঢাকায় যাওয়ার আগেই প্রিপারেশন শেষ করে ফেলবো। ঢাকায় এসে আর পড়বো না। রিল্যাক্স করবো। সেটার জন্য আমাকে ঈদের দিন যেভাবেই হোক কম করে ৪ ঘন্টা পড়া লাগবেই। নাহলে আমার সব পড়া ঠিকভাবে শেষ হবে না ২৭ তারিখের মধ্যে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না যে ঈদের দিন কিভাবে সম্ভব ৪ ঘন্টা পড়া। মানুষ আসবে বাসায়, তারা দেখলে বলবে আমার মাথা নিশ্চয়ই খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু যাই হোক। নামাজ টা পড়ে এসেই পড়তে বসে গেছিলাম। ২ ঘন্টা preposition আর phrase and idioms, group verbs গুলা দেখতে দেখতে হুট করে আমার এক কাজিন ঢুকে পড়লো রুমে। এসে বলে ভাইয়া চলো বাইরে যাই। আর পড়া হলোনা, পড়া রেখে দিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু আমার মধ্যে টেনশন উঠে গেছিল যে বাকি ২ ঘন্টা টা কিভাবে সামাল দিব। যাই হোক, একটু কষ্ট করে সেদিন রাতের বেলা ম্যানেজ করে নিয়েছিলাম।

*****
মোট কথা ভাই, এবছর কোন ঈদ নাই, কোন পূজা নাই। দুই একটা ঈদ বা পূজার জন্য সারাজীবনের ঈদ বা পূজার আনন্দগুলোকে কমিয়ে ফেলাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। তাই বলে ঈদের দিন বা পূজার দিনও পড়তে হবে এমন কোন কথা নাই। আমি যেটা বুঝাতে চাইলাম সেটা হলো রুটিন মেইনটেন করার জন্য কিছু কিছু আনন্দের বলি চড়াতেই হয়।

*****

আবারও বলছি, #আমি_কোনো_রুটিন_বানিয়ে_দেইনি। এগুলা শুধু উদাহারণ দিচ্ছি বুঝানোর জন্য। কেউ আবার এগুলাকেই হুবুহু কপি মেরে follow করতে যেও না। তাহলে লাভ নাই। নিজের অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে নিজের টা প্রস্তুত করতে হবে সবাইকে। হ্যাপি রিডিং।

****

#মেনশন_করে_সবাইকে_পোস্টটা_খুঁজে_পেতে_সাহায্য_করো

#বেশী_বেশী_শেয়ার_করো

#শুভকামনা

Wasif Azim Supto
BBA, Dept of Accounting and Information Systems,
Faculty of Business Studies,
University of Dhaka