
কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
---------------
বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে যে তিন ত্রয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ে
বঙ্কিমচন্দ্র ,রবীন্দ্রনাথ,শর
কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহন করেন ১৮৯৪ এ, হালিশহর, কাঁচড়াপাড়ায়। তাঁর ছোটো থেকে বড়ো হওয়া, চাকরি জীবনে পাওয়া অভিজ্ঞতার ছাপ খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর রচনায়।
রচনাবলী
উপন্যাস :-
পথের পাঁচালী :-
বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণের আবির্ভাব পথের পাঁচালী উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। তাঁর লেখক স্বভাবের বৈশিষ্ট্য হল তিনি ছিলেন সত্য ও সুন্দরের সাধক। “পথের পাঁচালী ” তে একটি শিশু মনের সুন্দর ছবি লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন।
পথের পাঁচালী প্রকাশিত হয় ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে, মহালয়ার দিন, ১৯২৯ খ্রি:। পথের পাঁচালী ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় “বিচিত্রা” পত্রিকায়। বইটির বিজ্ঞাপনে লেখা হয়েছিল – “প্রকৃতির স্বাধীন আবহাওয়া একটি শিশুচিত্তকে কীভাবে সংসার সংগ্রামের উপযোগী করিয়া তুলিতেছে তাহারই বিচিত্র ইতিহাস অপরুপ ভঙ্গিতে বলা হইয়াছে।’ ভাগলপুরে অবস্থান কালে লেখক এই উপন্যাস রচনা করেন। পথের পাঁচালী (১৯২৯) উৎসর্গ করা হয়েছে তাঁর পিতৃদেবকে। এই উপন্যাসটির পটভূমি গ্রামবাংলার প্রকৃতি। নিজেই এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন -‘পথের পাঁচালীর গ্রাম্য চিত্র গুলি সবই আমার স্বগ্রাম ব্যারাকপুর’।
ইংরেজি,ফরাসি,জা
পথের পাঁচালীর মূল চরিত্র হল – অপু ও দুর্গা। এদেশে শিশু মনোস্ততত্ত্বের প্রথম পরিচয় ফুটে ওঠে আলোচ্য রচনায়।
রবীন্দ্রনাথ ‘পরিচয়’ পত্রিকায় পথের পাঁচালী নিয়ে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন। ‘পথের পাঁচালি’ নিয়ে সত্যজিৎ রায় তৈরী করেছিলেন তাঁর বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র ।
অপরাজিতা :
এটি প্রকাশিত হয় ১৯৩২ খ্রি: এ।পথের পাঁচালী যেখানে শেষ অপরাজিতার শুরু সেখানে। অপু এখানে তরুণ। ১৯৩২ খ্রিঃ রচিত এই উপন্যাসটি উৎসর্গ করা হয়েছে তাঁর মাতৃদেবীকে।
পথের পাঁচালীর যেখানে শেষ অপরাজিত সেখানেই শুরু। পথের পাঁচালীর অপুর অপরাজিত জীবনের কাহিনী এই ‘অপরাজিত’ উপন্যাস।
দৃষ্টিপ্রদীপ :
এটির প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ এ। চরিত্ররা হল :- জিতু, মালতী। উপন্যাসে প্রেমের উপাখ্যান, ব্যর্থ প্রেমের স্মৃতি, প্রকৃতি ভাবনা বড়ো হয়ে উঠেছে । শরৎচন্দ্রের “শ্রীকান্ত” এর প্রভাব এতে দেখা যায়।
আরণ্যক :
বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস গুলির মধ্যে অন্যতম আরণ্যক “। আরণ্যক ধারাবাহিক ভাবে “প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অরণ্য ও অরণ্যের সঙ্গে সংযুক্ত আদিম গন্ধবাহী নানা জাতির মানুষ এই উপন্যাসের পটভূমি রচনা করেছে। ১৯৩৯ খ্রিঃ রচিত এই উপন্যাসটি কবিপত্নী গৌরী দেবীকে উৎসর্গ করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। উত্তরবিহারের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ও তাদের আরণ্যক প্রকৃতির কাহিনী ও জীবনযাপনের মর্মগাঁথা এই উপন্যাস। বিভূতিভূষণের কাব্যমনস্কতার পরিচয় পাওয়া যায় এই উপন্যাসে। অনেক সমালোচকের মতে এই উপন্যাসটি বিভূতিভূষণের আত্মজীবনী মূলক উপন্যাস।
আদর্শ হিন্দু হোটেল :
রানাঘাটের একটি হোটেল কে কেন্দ্র করে কাহিনি আবর্তিত। ১৯৪০ খ্রি: প্রকাশিত হয়। পদ্ম ও হাজারি ঠাকুর উল্ল্যেখযোগ্য চরিত্র। এই উপন্যাসটি উৎসর্গ করা হয়েছে শ্রীমান নুটুবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায়ক
বিপিনের সংসার :
বিবাহিত জীবনের ছবি এতে ধরা পড়েছে। প্রকাশকাল – ১৯৪১ খ্রি:।
চরিত্র:- বিপিন, মানী ও শান্তি। বিপিন চরিত্রে ভণ্ডামি ও তার দুই বিবাহিত স্ত্রীর চরিত্রের মনস্তাত্বিক উত্থান পত্তনের কাহিনী এই উপন্যাস।
দুই বাড়ি : অভাব, দৈনতা, প্রেম এখানে আলোচিত। মোক্তার নিধিরামের আখ্যান । চরিত্র – নিধিরাম, মঞ্জী, হৈম। উৎসর্গ করা হয়েছে কল্যাণীযা বধূমাতাকে।
দেবযান :
বিভূতিভূষণের আধ্যাত্মিকতার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেছে এই উপন্যাসে। প্রকাশ – ১৯৪৪ । প্রায় ৫ বছর ধরে এটি রচনা করেন। অলৌকিকতা ও গ্রাম্যতার এক নিবিড় যোগসূত্র রচনা হয়েছে এই উপন্যাসে। )
মানব আত্মার বিভিন্ন অবস্থানের উপর ভিত্তি করে রচিত এই উপন্যাসটি উৎসর্গ করা হয়েছে শ্রীযুক্ত ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায় মহাশয়কে।
অনুবর্তন:
লেখকের শিক্ষা জীবনের অভিজ্ঞতা এতে দেখা যায়। প্রকশ:- ১৯৪১ এটি একটি রোমাঞ্চ-রহস্য ধর্মী রচনা।
কেদাররাজা:
নাটকীয়তা ও অলৌকিকতা এখানে দেখানো হয়েছে। প্রকাশ- ১৯৪৫
ইছামতী :-
ইছামতীর তীরে জনজীবন এবং ইতিহাস এই উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু। প্রকাশ – ১৯৫০ খ্রি:। দীনবন্ধুর নীলদর্পণ এর ছায়া এতে দেখা যায়। ইছামতী র টুলু বাংলা সাহিত্যে শিশু চরিত্র সৃষ্টির এক অভিনব প্রয়াস। জনজীবনেত প্রবাহমানতার প্রতীক হল ইছামতী। জীবনানন্দের রুপসী বাংলা” ছবি এই উপন্যাসে কোনো কোনো জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়। এটি লেখকের শেষ উপন্যাস। ইছামতী লেখক কে মরণোত্তর ‘রবীন্দ্র পুরস্কার” এনে দেয়।
অশনি সংকেত :
দ্বন্ধ সংঘাত ময় জীবনের ছবি এতে ফুটে উঠেছে। প্রকাশ- ১৯৫১ লেখকের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত উপন্যাস এটি।
কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণের ছোটগল্পগ্রন্থগু
লেখকের প্রথম গল্প গ্রন্থ “মেঘমল্লার” এর প্রতিনিধি স্থানীয় গল্প হল – পুঁইমাচা। এটি প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। যাত্রাবদল গল্পগ্রন্থের একটি উল্ল্যেখযোগ্য গল্প হল – “ভন্ডুল মামার বাড়ি “। লেখকের গল্পের সংখ্যা প্রায় দুশোর বেশি। তাঁর কিছু গল্পের নাম হল – ‘পুইমাচা’, ‘খুটিদেবতা’, ‘নাস্তিক’, ‘মেঘমল্লার’, ‘মৌরিফুল’,’ভণ্ড
ডায়েরী বা দিনলিপি স্মৃতির রেখা -১৯৪১ তৃণাঙ্কুর -১৯৪৩ উর্মিমুখর -১৯৪৪ উৎকর্ণ -১৯৪৬ হে অরণ্য কথা কও -১৯৪৮
ভ্রমণ কাহিনী অভিযাত্রী -১৯৪১ বনে পাহাড়ে -১৯৪৫
পরিশেষে বলা যায় –
প্রকৃতিপ্রীতি হল বিভূতিভূষণের রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতি বর্ণনার পাশাপাশি শৈশব চিত্র, আধ্যাত্মিকতা ও বাস্তবতার চিত্র তাঁর রচনায় সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। কবিত্বপূর্ণ বর্ণনা দেখা যায় “আরণ্যক “উপন্যাসে। তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বাঙালি জীবনের যথার্থ এপিক পথের পাঁচালী। তাঁর ছোটগল্পে ফুটে উঠেছে প্রকৃতি প্রেম,অআধ্যাত্ম